Header Ads

দাওয়াতী সফর রাজশাহী জেলা পর্ব-৩



মাগরিবের নামাজের পর বসে আছি মাদরাসার উস্তাদের সাথে উস্তাদগণ ২য় সাময়ীক পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে ব্যস্ত ল্যাপটপের প্রশ্ন করছেন তিনারা। আমি আর আব্দুল বাসির ভাই বসে রইলাম পাশেই কিছুক্ষণ পর আব্দুল্লাহ তালহা ভাই বললেন আমাদের মাদ্রাসার মিটিং আছে আজ। আপনারা বসেন উনারা আসলে আলোচনা শুরু করবেন। আমি তো আছি এই বলে চলে গেলেন তিনি; কিছুক্ষণ পর ইমতিয়াজ সাহেব আসলেন, কিছুক্ষণ পর আসলেন মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব তিনি মুফতি নাজিম উদ্দিন সাহেবের বন্ধু রাজশাহী  শাহ মখদুম রহ. দরগা মসজিদের ইমাম ও খতিব কথা হলো কয়েক মিনিট সালাম মুসাফা করে চলে যাবেন সময় নেই তিনার। আরেকটি প্রোগ্রাম আছে  তিনি আমাদের দাওয়াতি কাজের সমর্থন জানিয়ে বিদায় নিলেন। সালাম মোসাফা হল আলোচনা শুরু হলো ইমতিয়াজ সাহেবের সাথে প্রথমে পরিচয় দিলাম আমি ও  আব্দুল বাসির ভাইয়ের। তিনি পরিচয় খুব ছোট করে দিলেন আমি বললাম পরিচয়টা অনেক ছোট হয়ে গেল না; তিনি হাসি দিলেন আমি বললাম আমরা তো জানি আপনার আরও কিছু পরিচয় আছে। আপনার কলামগুলো পড়ি ভালোই লাগে ম্যাগাজিনে ইনকিলাব সমকাল বেশ কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় হিসেবে লেখা গুলো ভালোই লাগে। সম্পাদকের বিষয়ে কিছু শেয়ার করলেন তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সিরাত বিশ্বকোষ এটাকে পাবলিশ করবেন বলে জানিয়েছেন মাকতাবাতুল আযহার ।

কথা হচ্ছিল তিনি বলে উঠলেন যে বিষয়ে কোন আলোচনা সামনে আসলো; তিনি বললেন কিতাবুল মোকাদ্দসের কথা আমিতো কিতাবুল মুকাদ্দাসের অনেক কিছু পেয়েছি, সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু সালামের কথা ’মুহাম্মদ‘ শব্দের অর্থ অন্যান্য ধর্ম গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । অবশেষ আমি বললাম এই বিষয়ে তো অনেক আছে বলে তো আছেই  আব্দুল বাসির ভাই তিনি বললেন বাইবেলের নানা দিক নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। আমিও সাথে বললাম যে আপনাদের রাজশাহীতে খ্রিস্টান মিশনারীদের অপতৎপরতা অনেক বেশি, অনেকগুলো মিশন আপনাদের রাজশাহী থেকে পরিচালিত হচ্ছে অথচ আলেমসমাজ অাজ তারা কিছুই জানেন না। তারা বলতেছেন যে আসলেই বেশি আমাদের তেমন ধারণা নেই হতেও পারে! আমাদের সামনে তেমন কিছু দেখি না অথচ বাংলাদেশে খ্রিস্টান মিশনারীদের পাঁচটি জেলাকে তারা  বিভাগীয় প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ধর্মীয় প্রদেশ সে হিসেবে রাজশাহী ও একটি ধর্মীয় প্রদেশ। আব্দুল বাসির ভাইয়ের কাছ থেকে শোনা তিনি বলতেছিলেন যে অনেক খ্রিস্টানদের সাথে সাক্ষাত হয়েছে; তারা বেশিরভাগ সময় রাজশাহী জেলার পরিচয় দিয়ে থাকে নিজেদেরকে। ইমতিয়াজ সাহেব একটি উত্তর বের করলেন, যে হিসাবে রাজশাহীকে একটি স্থান দিয়েছে হতে পারে, এইজন্য তারা ধর্মীয় প্রদেশের দিকে ইঙ্গিত করে এটা তারা বলতে থাকে। আলোচনা প্রায় শেষের দিকে তিনি বলছেন মসজিদের ইমাম হিসাবে আছি এবং রাহমানিয়া মাদরাসার শিক্ষক,  নামাজ পড়াতে হবে আমাকে তাই বিদায় নিতে হচ্ছে। সার্বিকভাবে আপনাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ কাজকে পছন্দ করি, এ কাজের সাথে থাকতে চাই, আমাদের একটাই কথা। আমি বললাম আমরা আপনাদের কাছে এসেছি আপনারা যেভাবে পরামর্শ দিবেন, সেই ভাবে আমরা কাজ করবো। সহি এখলাসের সাথে এবং আল্লাহকে রাজি করার জন্য, আল্লাহকে খুশি করার জন্য, এই কাজ তো আপনাদের; আমরা তো আপনাদের সহযোগী হিসেবে আপনাদেরকে জানানোর জন্য এসেছি। অবশেষ আব্দুল বাসির ভাই বললেন; আমরা নওগাঁ এবং রাজশাহীতে একজন দা‘য়ী দিতে চাই। আপনাদের কাজ হবে শুধু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন আর রাহাবারি করবেন। দায়ী কোথায় কাজ করবে সেই দিক নির্দেশনা দিবেন, আর বাকি যা কিছু খরচ এগুলো আমরা বুঝব। কিছুক্ষণ পর তিনি চুপ থেকে বললেন সবই বুঝেছি কিন্তু .....আসলে ......আমাদের এগুলো নিয়ে সময় দেয়ার মত মাদ্রাসা অবস্থা গুলো বেশি ভাল না। তবে আপনারা কাজ চালিয়ে যান আমরা সহযোগিতা করব। তিনি ঠিকানা দিলেন জামিয়া উসমানীয়া হোসাইনাবাদ, মাদ্রাসার কথা সন্দীপ পীর সাহেব রহ. তিনি মাদ্রাসা কে চালু করেছিলেন। যা এখন বর্তমানে ঢাকা জামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম মাদানীনগর মাদ্রাসা'র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ; সেই মাদ্রাসার কথা যে সেখানে যদি আপনারা যান তাহলে হয়তো আপনাদের একটি ব্যবস্থা হয়ে যাবে। থাকার এমন আশ্বস্ত করলেন,  আমরা নিরাশ হইনি ; আমরা দায়ী দিনের জন্য আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য ইসলামের দাওয়াতকে অমুসলিম ও মুসলিমের মাঝে গোটা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এক মিশন নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। দায়িত্ব কখনো পিছপা হবে না যে যাই বলুক না কেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বের হয়ে যাচ্ছিলেন আব্দুল বাসির ভাই ব্যাগ থেকে খ্রিষ্টান মিশনারীদের অপতৎপরতার কিছু বই দেখালেন। বলুন তো এটা কি? মুসলিমদের বই! বোঝার উপায় নেই এগুলো দেখার পর আমি ওনাকে তথ্য দিলাম আপনি গুগোলে সার্চ দিবেন “জীবনের কথা” তাহলে সেখানে খ্রিস্টানদের অনেক বই পাবেন প্রায় হাজারের মতো বই আছে। যেগুলো অপব্যাখ্যা করে তারা বিভিন্ন মুসলমানদেরকে ধর্মে দীক্ষিত করছে। চমৎকার তথ্য দিয়েছেন তিনি তা হলো এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য  কিন্তু কে যাবে এতো দূর পর্যন্ত। তাদের হাত বহুদূর পর্যন্ত লম্বা তাদের সাথে পেরে ওঠাটা অনেক কঠিন ব্যাপার যা এক প্রকার চ্যালেঞ্জ এর মত ।

উনাকে সাধুবাদ জানিয়ে বিদায় দিচ্ছি এশার আযান হয়ে যাবে কিছুক্ষণ পর নামাজের অপেক্ষায় ছিলাম। হঠাৎ প্রিয় বন্ধু মাসুম এর ফোন আসলো, বিকালে মাসুম বলেছিল এশার নামাজ শেষ করে তোমার সাথে দেখা করব। মাসুম এর সাথে দেখা নেই প্রায় চার বছর হল। অনেকদিন আগেই দেখা হয়েছিল ময়মনসিংহ মাসকান্দা মাদ্রাসার মাহফিলে। দুজনে দূরে থাকার কারণে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ও দূরেই রয়ে গেল। মোবাইলে হয়ত কথা হয় ফেসবুকে চ্যাটিং তারপরও সেই সাক্ষাৎ আর হয় না । আমি অজু করতেছিলাম এমন সময় দরজায় নক করল মাসুম। আব্দুল বাসির ভাই দরজা খুলে দিলেন মাসুম সালাম দিলো বললেন জহির আছে? আব্দুল বাসির ভাই বললেন অজু করতেছে। আমি অজু করে আসলাম মনটা আনন্দে ভরে গেল বন্ধুর সাথে বহুদিন পর দেখা। বন্ধুদের সাথে দেখা হলে যেমন আচরণ হয় তা হুবুহু তুলে দরলাম। কেমন আছিস? কি দোস্?  কি অবস্থা? অনেকদিন পর দেখা  আজ রাজশাহী। তুই মোটা হয়ে গেছিস মাসুম বলল তুই এত মোটা হয়ে গেছিস যাক অবশেষে কথা বলতে শুরু করলাম কেমন আছিস কি অবস্থা বিয়ে করেছিস কিনা অসময় বিয়ে করলি আমরা জানি না। অবশেষ আমাদের মিশন সম্পর্কে বললাম। বন্ধু মাসুম হাফেজ, মাওলানা, মুফতি, শেষ ভার্সিটি থেকে অনার্স করেছে, বিসিএস এর জন্য চেষ্টা করতেছেন। যাক জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় বিয়ে করেছিস সে বলল রংপুর! আমি বললাম ভালোই হয়েছে। বাড়ি ময়মনসিংহ, থাকিস রাজশাহী, আর বিয়ে করেছিস রংপুরে। আমাকে বলল তোর কি খবর আমি বললাম আমার কোন খবর নেই। সবেমাত্র লেখাপড়া শেষ করেছি এখন দাওয়াতী কাজের জন্য রাজশাহী বিভাগে সফর করতেছি।

এটাই আমার কাজ, এটাই আমার পেশা, ধর্মের ফেরিওয়ালা হিসেবে বিভিন্ন জেলায় সফর। বন্ধুকে বোঝানো হলো আমাদের মিশন সম্পর্কে আসার কারণ। সে আমাদেরকে বলল আসলে এই কাজ যোগ্যতা সম্পূর্ণ  আলেম ছাড়া খুবই কম করবে। এরকম লোক খুবই কম মাত্র কয়েকজনের কথা বলল সে। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম! রাজশাহীর মত একটি বিভাগ জেলা শহরে মাত্র কয়েকটি মাদ্রাসা তেমন উল্লেখযোগ্য ওলামায়ে কেরাম নেই। আমি বললাম কিভাবে কাজ করব, এদের কাছে যাবো তুমি আমাকে একটি লিস্ট করে দাও তাদের নাম্বার আমাকে দাও মাসুম সে বেশ কয়েকজনের নাম্বার ও দিল নাম্বার গুলো নোট করে নিলাম। ফোনে যোগাযোগ করে নিব আর তাদের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাত করব কিছুক্ষণ পর মাসুম বিদায় নিয়ে চলে গেলে। আমি আর বাসির  ভাই বসে রয়েছি নামাজ পড়ে। খানায় বসলাম আব্দুল্লাহ তালহা ভাই বলতেছিলেন আগামী কাল কি? কি? করবেন। তখন বললাম আমরা আগামীকালকে এই লোকদের সাথে সাক্ষাত করব কথা বলব এই বিষয় নিয়ে। তিনি বললেন আজকের রাতটা আপাতত আপনারা এখানেই থেকে যান। মাদ্রাসা এলাম ঘড়ির কাঁটা তখন বাজে ১১ টা বিছানায় শুয়ে পড়লাম দুজনে পাশাপাশি। চিন্তা করতেছিলাম আজ থেকে প্রতিদিন সফরের কারগুজারী গুলো লিখবো। লেখা শুরু করলাম, মোবাইল এর মাধ্যমে তারপর লেখাগুলো পোস্ট করলাম। কিছুক্ষণ পূর্বে মুফতি যুবায়ের সাহেব তিনি হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়েছেন কারগুজারীগুলো যেন সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ না করি। তাই আজ থেকে আর সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করব না। সফর শেষে লম্বা একটি সফরনামা লিখে হুজুর কে দেখাতে হবে। তাই আজ থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখাগুলো পাবলিশ করব না। একসাথে পাবলিশ হবে কিছু দিন পর পর্ব আকারে তবে নিয়মিত লিখে যাব এ অঙ্গীকার নিয়ে আছি কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে গেলাম তাহাজ্জুতের অপেক্ষায়।

No comments

Powered by Blogger.