Header Ads

দাওয়াতী সফর রাজশাহী জেলা পর্ব-২



রাজশাহী স্টেশন থেকে বের হলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে অনেক অটো জিজ্ঞাসা করলাম; এই মামা যাবেন ভদ্রা মোড়ে! উঠে পড়লাম অটোতে শীতের বাতাসে যেন শরীলের হাড় পর্যন্ত কেঁপে উঠছে ৫ মিনিটের রাস্তা অটো এসে দাঁড়ালো ভদ্রার মোড়ে ড্রাইভার বলল চলে এসেছি মামা নামেন। নেমে পড়লাম অপেক্ষা এখন তালহা ভাইয়ের। কিন্তু তিনি তো আসতেছেন না; তিনি একজন প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন তিনি হলেন মাদ্রাসার একজন নূরানীর উস্তাদ । আমরা ১০ মিনিট রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিছুক্ষণ পর বাসির ভাইকে বললাম চলেন সকালের নাস্তা করি উনি আসতে হয় তো দেরি হবে। অনেকক্ষণ দাড়ানোর পর ভাই ভাই হোটেল নামে একটি হোটেলে ঢুকে পড়লাম খাবার অর্ডার দিলাম। যখন অর্ধেক খাবার হলো তখনই ফোন আসলো তালহা ভাই বললেন আমি একজন লোক পাঠিয়েছি আপনাদেরকে রিসিভ করার জন্য । আমরা খাবার শেষ করলাম তখনই দেখলাম উস্তাদ তিনি আসতেছেন আব্দুল বাসির ভাই ও উঠে গিয়ে ওনাকে রিসিভ করলেন তিনাকে নাস্তা খাওয়ালাম। নাস্তা শেষে পায়ে হাটা শুরু করলাম এক মিনিটের রাস্তা অটো পাওয়া যাচ্ছিল না। রেললাইন পার হতে না হতেই অটো পাওয়া গেল; অথচ রাস্তায় হেঁটে গেলেও হয়তো পাঁচ মিনিটের বেশি লাগার কথা না।

দুজনেই উঠলাম ভাড়াটা দিয়ে দিলেন আমরা বার বার বললাম যে না আমরা দেবো উনি বললেন না আমি দিয়ে দিচ্ছি। অটো দিয়ে যাচ্ছিলাম মনে হচ্ছে যেন ঢাকার উত্তরা অথবা বনানী এলাকা রোড  দিয়ে যাচ্ছি রাজশাহী শহরে এমন এক দৃশ্য আসলেই যেন এক ঢাকার মতো ১৫ মিনিট পর ঢুকে পড়লাম আবাসিক এলাকা। পদ্মা আবাসিক এলাকা, সামনে পড়লো মাদরাসার বিশাল ব্যানার মাদ্রাসার নাম; জামিআ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. রাজশাহী। এই মাদ্রাসাটি মূলত প্রাইভেট কয়েকজন তরুণ আলেম এর উদ্যোক্তা তার মধ্য থেকে আব্দুল্লাহ ভাই তিনিও একজন। সরাসরি চলে গেলাম মাদ্রাসার দোতালায় তিনি বললেন আপনারা এখানে থাকেন বিশ্রাম নিন, সারারাত জার্নি করে এসেছেন। আমি আবার সকালে ঘুম ই অভ্যস্ত তাই আব্দুল বাসি ভাই কে বললাম ভাই আমার একটু ঘুমাতেই হবে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম সাথে আব্দুল বাসির ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘড়ির কাঁটা ১০:৩০ উপস্থিত করা হলো সকালের নাস্তা , রুটি ,ডাল ভাজি, ডিম দিয়ে নাস্তা করলাম ।  জিজ্ঞাসা করলাম আব্দুল বাসির ভাই  তিনি ফোন দিয়েছিলেন আব্দুল্লাহ ভাইকে তিনি বলেছেন আমি একটু ব্যস্ত আছি বাসার কাজে কিছুক্ষণ পর আপনাদের সাথে দেখা করবেন ইনশাল্লাহ। এখন তিনার জন্য অপেক্ষায় আছি নামাজের সময় হয়ে গেছে; যোহরের নামাজ মসজিদে ১ টা ১৫ মিনিটে দোতলা থেকে নেমে গেইটের দিকে যাচ্ছিলাম তখনি পাশে থেকে সালামের আওয়াজ আসল। তিনি নিজ থেকেই পরিচয় দিচ্ছেন আমি আব্দুল্লাহ তালহা, আমি তিনাকে চিনতে পারিনি কিন্তু বাসির ভাই চিনতে পেরেছেন মোসাফা করলাম দুজনে। তারপর মসজিদের দিকে চললাম সেখানে গিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হলো, গরুর গোশত, ডিম, মাছ ভর্তা ,ইত্যাদি। কয়েক দিন হল মাদ্রাসার পরীক্ষার প্রস্তুতি চলতেছে সামনে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা।

উস্তাদগণ পরিক্ষার প্রশ্ন তৈরী করা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। সময় দেওয়ার মতো সময় উনাদের হাতে এখন কারো নেই। একটু আগে আমাদের সাথী ভাই শামীম আশরাফ আমরা একসাথে দাওয়া পড়েছি; তিনার বন্ধ সাথে পরিচয় হলাম উনি মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে এই বছরই জয়েন দিয়েছেন। কথা হলো উনার সাথে বেশ ঘন্টা । অনেক জানলাম মাদ্রাসার হাল অবস্থা, তিনজন তরুন আলিম উদ্যোক্তা নিয়ে শুরু হয়েছিল এই মাদ্রাসার পথযাত্রা। তালিমে মুরুব্বি হিসেবে ও দিকনির্দেশনা রয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম আলেমে দ্বীন বাংলাদেশ উস্তাদুল আসাতিযা আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হোসেন সাহেব দা.বা যিনি; মিরপুর আকবর কমপ্লেক্স এর মুহতামিম। মুফতি তাকী উসমানী দা.বা. এর অন্যতম ছাত্র তিনার সান্নিধ্যে প্রায় ১১ বছর ছিলেন। মুফতি দিলাওয়ার সাহেব তারই তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ফোন দিলাম আমার এক বন্ধু মাওলানা মুফতি মাসুম ময়মনসিংহে তার বাড়ি। শরহে বিকায়া পড়েছি একসাথে জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলূম মাসকান্দা মোমেনশাহী মাদ্রাসাতে। যেখানে কেটেছে আমার শিক্ষা জীবনের ৫টি বসন্ত। ফোন দিলাম কিন্তু নাম্বার বন্ধ তাই জিজ্ঞাসা করা হলো না ; অবশেষে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফেসবুকের লগইন করলাম ফেসবুকে মেসেজে নক করলাম। দোস্ত তুমি কোথায় আছে এখন ? উত্তর দিলো আমি রাজশাহিতে!  তুমি কোথায়?  আমি তো রাজশাহীতে আছি!  সে বলল কোথায় আছো ? আমি মাদ্রাসার ছবি তুলে নিয়েছিলাম প্রবেশ করার সময় সেই ছবিটি দোস্তকে সেন্ড করলাম। ছবি দেখেই সে বলতেছে আ-রে এই মাদ্রাসা তো আমি চিনি! তুমি আমার কথা বলো সবাই আমাকে চিনবে। সে যে এই মাদ্রাসার ছাত্র আমি তা জানি নি আগে। আমি ভাবলাম বেশ কয়েক বছর যাবত রাজশাহীতে ইমামতি করতেছে তাই ইমামদের সাথে পরিচয় থাকা সুবাদে তাদের সাথে পরিচিত হওয়া স্বাভাবিক । আমরা কাইরুল্লা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম আসরের পর দেখা হলো আবার আব্দুল্লাহ তালহা ভাই এর সাথে।

তিনি বললেন মাগরিবের পর আমাদের মাদরাসায় পরামর্শ হবে। আসার জন্য বেশ কয়েকজন ভাইকে ফোনে জানানো হলো তার মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলাদেশের একজন লেখক, অনুবাদক, গবেষক, মাওলানা ইমতিয়াজ আহমেদ; পত্রিকায় লেখালেখি করেন আলেম সমাজে থেকেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তিনি। ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন কিন্তু আমার মনে নেই তিনি যে রাজশাহীর লোক। হঠাৎ করে মনে পড়ল তার কথা নাম শোনা মাত্রই তখন আমি বললাম আমি তিনাকে চিনি কিন্তু ওভাবে পরিচিতি নেই। আরো বেশ কয়েকজনকে ফোন করা হলো অবশেষে বললেন মাগরিবের পর বেশ কয়েকজন আসবে তাদের সাথে আলোচনা করে শুরু করা যাবে আমাদের এই দাওয়াতি কাজ এবং এই মিশন। মাগরিবের অপেক্ষায় ছিলাম যথারীতি মসজিদে মাগরিবের নামাজের জন্য চলে গেলাম মাগরিবের পর অপেক্ষায় রইলাম কখন আসবেন; তাদের সাথে দাওয়াতি বিষয়ে আলোচনা করব।

No comments

Powered by Blogger.