Header Ads

বিয়েতে দাওয়াত না দেওয়াও সাহাবাদের আদর্শ!


দাওয়াত না দেওয়াও সাহাবাদের আদর্শ।
দাওয়াত না দিলে / না জানিয়ে বিয়ে করলে রাগ না করা নবীজীর সুন্নাত। সাহাবাদের সহজ সরল জীবন-যাপন ও তাদের মহর।

বিস্তারিত: হাদীস-৪৩: হযরত আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ)—এর গায়ে জাফরান রং—এর দাগ দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ কি? তিনি বললেন, হুযূর! পৌনে ষোল মাশা সোনার মহরের বিনিয়মে আমি এক মহিলাকে বিবাহ করেছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে বরকত দিক। তুমি একটি বকরী দ্বারা হলেও অলীমা কর। (বোখারী, মুসলিম) আলোচ্য হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় জানা গেল। (১)  হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর একজন ঘনিষ্ট সাহাবী ছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সাথে সাহাবাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের চেয়েও গভীর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাহাবাদের বিবাহ-শাদী এতই অনাড়ম্বর ও সাদা-সিদা ছিল যে, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ)—এর বিবাহের একদিন পর জিজ্ঞাসা করে তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলেন! সরলতার কি অপূর্ব নিদর্শন। (২) হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ একজন বড় সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। এমনকি ব্যবসা লব্ধ মুনাফায় তার ঘর একজন বড় জমিদারের রকমারী ফসলের ন্যায় কানায় কানায় ভরে যেত। তা সত্ত্বেও তার বিবাহ এতই সরল সহজ ও অনাড়ম্বর ছিল যে, মদিনায় বিবাহ হলো আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলেন না। আবার মহরও ছিল মাত্র পৌনে ষোল মাশা (এক তোলা) সোনা। (৩) এই মহান সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর এতই আপন ছিলেন যে, প্রতিটি যুদ্ধে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সাথে বীরবিক্রমে লড়াই করেছেন। তা সত্ত্বে বিবাহের পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না জানানোর কারণে তিনি মোটেই দুঃখ প্রকাশ করেন নি। বরং বিবাহের সংবাদ শুনে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছেন ও বরকতের জন্য দোয়া করেছেন। (৪) অলীমার বেলায়ও সরলতা অবলম্বন করা দরকার। এতে একটি বকরীই যথেষ্ট। আমাদের দেশে সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে সকলকে একত্রিত করে মহা ধুমধামে না হলে তো অলীমাই হয় না। এমনকি ঋণ করে হলেও তা করতে হয়। অথচ তৎকালে একটি বকরী যবাই করে খাওয়ানোই ছিল সবচেয়ে বড় অলীমা। হাদীস-৪৪: হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত যয়নব (রাঃ)—এর বিবাহের অলীমার ন্যায় কোন স্ত্রীর বিবাহে জাঁকজমকপূর্ণ অলীমা করেন নি। আর হযরত যয়নব (রাঃ)—এর বিবাহে মাত্র একটি বকরী দ্বারা অলীমা করেছেন। (বোখারী, মুসলিম) এই হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, অলীমার জন্য একটি বকরী যবাই করাই খুব বড় অলীমা। মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর দ্বিতীয় অলীমায় চিত্র নিম্নের হাদীস থেকে দেখে নিন। হাদীস-৪৫: হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ ভ খায়বার ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে তিন দিন অবস্থান করেন। সেখানে হযরত ছাফিয়্যা (রাঃ)—এর সাথে তার বিবাহ হয়। আমি মুসলমানদিগকে তার অলোমার দাওয়াত দেই। সেই অলীমায় না ছিল রুটি, না ছিল গোশত। বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর নির্দেশে চামড়ার দস্তরখানা বিছানো হলে তাতে কিছু খেজুর কয়েক টুকরা পনীড় ও কিছু ঘি ছড়িয়ে দেয়া হয়। (বোখারী) এই হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, অলীমার জন্য বিশেষ কোন আড়ম্বর বা লৌকিকতার প্রয়োজন নেই। বরং সহজে যা সম্ভব হয় তাই ব্যবস্থা করবে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর আদর্শ আজ আমরা ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সুন্নত অনুযায়ী বিবাহ করতে কাউকেই দেখা যায় না। হাদীস-৪৬: হযরত ছাফিয়্যা বিনতে শায়বা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র দুই সের যব দ্বারাই কোন এক বিবির অলীমা করেছেন। (বোখারী) এই হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সরলতার নমূনা । মুসলমান! তোমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর আদর্শের প্রতি লক্ষ্য করে দেখ যে, তার জীবন কতটুকু সহজ ও সরল ছিল এবং কতটুকু আড়ম্বরমুক্ত ছিল। এখনও কি আপনাদের চোখ খুলবে না? দূঃখের বিষয় যে, বিবাহ আজ গরীবের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাড়াবাড়ির কারণে অনেকের বিবাহই হয় না। অমূলক কুসংস্কারের কারণে মানুষের মর্যাদা আজ কুত নীম্নে নেমে এসেছে। ইসলাম কুসংস্কার থেকে পবিত্র। কিন্তু আমরা কোন পথের যাত্রী? কবি বলেনঃ “ওহে বেদুইন আমার ভয় হয় যে, তুমি পবিত্র কাবায় পৌঁছতে পারবে না। কারণ তুমি যে পথে চলছ এই পথ তো তুর্কিস্থানের পথ।”

No comments

Powered by Blogger.