আল-কুরআনের বাণী ও বিজ্ঞানের সত্যতা প্রমান!
‘নগদ’ মানে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া, আর ‘বাকী’ মানে একটা নির্ধারিত সময়ের পরে পাওয়ার আশা। নগদে লেনদেনের ব্যাপারে আমরা সবাই সব সময় আগ্রহী। কিন্তু বাকিতে লেনদেনের ব্যাপারে আমরা স্বভাবতই সন্দিহান ও দ্বিধাগ্রস্ত। আমাদের সমাজে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে ‘বাকির নাম ফাঁকি। এ ক্ষেত্রে কবিতার প্রভাবও কম নয়, যেমন ‘নগদ যা পাও,/ হাত পেতে নাও,/ বাকীর খাতায় শূন্য থাক,/ দূরের বাদ্য কি লাভ শুনে,/ মাঝখানে তার বেজায় ফাঁক’।
তার পরও আমরা বাকীতে লেনদেন করি, করতে হয়। বাকীতে লেনদেন করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস। যদি পুরোপুরি বিশ্বাস হয়, একটা নির্ধারিত সময়ের পরে পাওনা পাওয়া যাবে, তাহলে আমরা বাকীতেও লেনদেন করি।
নগদ লেনদেনের ফল দৃশ্যমান, আর বাকী লেনদেনের ফল অদৃশ্যমান। যা কিছু দৃশ্যমান তার ক্ষেত্রে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসে না, আর যা কিছু অদৃশ্যমান তার ক্ষেত্রেই বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়।
অদেখা বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই একজন মুসলমানের পথচলা শুরু। মনে রাখতে হবে অন্ধ বিশ্বাসের চেয়ে যুক্তিনির্ভর বিশ্বাস অনেক বেশি টেকসই। তাই প্রতিনিয়ত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যুক্তিনির্ভর বিশ্বাসের মাত্রা বাড়াতে হবে। বিশ্বাসের মাত্রা যত বাড়বে, কাজকর্মের গুণগত মান ততই বাড়বে। যদি তা না হয়, বুঝতে হবে বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। প্রত্যেক মানুষ যখন কোনো কিছু করে, তা তার বিশ্বাসের ওপর ভর করেই করে।
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তার নিজস্ব কাজকর্মের গুণগত মান নিয়মিতভাবে যাচাইয়ের মাধ্যমে বিশ্বাসের মাত্রা নিরূপণ করা। কোনো বিষয় স্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্য উদাহরণ খুবই কার্যকর। ধরা যাক, নামাযের ব্যাপারে যদি বলা হয়, প্রতি রাকাত নামায আদায়ের জন্য মাথাপিছু এক শ’ টাকা নগদ দেয়া হবে, একই নামায মসজিদে গিয়ে আদায় করলে দুই শ’ টাকা এবং মসজিদে সামনের কাতারে আদায় করলে পাঁচ হাজার চার শ’ টাকা করে নগদ দেয়া হবে। নগদ লাভের আশায় প্রায় সবাই কি হুমড়ি খেয়ে পড়বে না ? অবশ্যই। এমনকি মসজিদে আগে গিয়ে সামনের কাতারভুক্ত হওয়ার জন্য সর্বত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি বাস্তবে সেটা হচ্ছে না। কারণ বেশির ভাগ মুসলমানের বিশ্বাসে ঘাটতি আছে, তাই ‘বাকী’তে লেনদেন করতে অনাগ্রহী।
একই ভাবে ধরা যাক, আল্লাহর প্রতিটি আদেশ পালনের এবং নিষেধ বর্জনের জন্য যদি নগদ পাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে কি সবাই সম্পদশালী হওয়ার জন্য সর্বত্র প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ত না ? অবশ্যই। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ফলে সমাজ ক্রমাগত রসাতলে যাচ্ছে। এভাবেও প্রমাণিত হলো বিশ্বাসে ঘাটতি থাকার কারণেই আমরা বাকীতে লেনদেন করতে অনাগ্রহী। আফসোস, মানুষ যদি জানত তাহলে পৃথিবীর সব সম্পদের বিনিময়েও পরকালের জীবনের সুখ ও শান্তি বিক্রি করত না।
নগদ লেনদেনের ফল দৃশ্যমান, আর বাকী লেনদেনের ফল অদৃশ্যমান। যা কিছু দৃশ্যমান তার ক্ষেত্রে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসে না, আর যা কিছু অদৃশ্যমান তার ক্ষেত্রেই বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়।
অদেখা বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই একজন মুসলমানের পথচলা শুরু। মনে রাখতে হবে অন্ধ বিশ্বাসের চেয়ে যুক্তিনির্ভর বিশ্বাস অনেক বেশি টেকসই। তাই প্রতিনিয়ত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যুক্তিনির্ভর বিশ্বাসের মাত্রা বাড়াতে হবে। বিশ্বাসের মাত্রা যত বাড়বে, কাজকর্মের গুণগত মান ততই বাড়বে। যদি তা না হয়, বুঝতে হবে বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। প্রত্যেক মানুষ যখন কোনো কিছু করে, তা তার বিশ্বাসের ওপর ভর করেই করে।
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তার নিজস্ব কাজকর্মের গুণগত মান নিয়মিতভাবে যাচাইয়ের মাধ্যমে বিশ্বাসের মাত্রা নিরূপণ করা। কোনো বিষয় স্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্য উদাহরণ খুবই কার্যকর। ধরা যাক, নামাযের ব্যাপারে যদি বলা হয়, প্রতি রাকাত নামায আদায়ের জন্য মাথাপিছু এক শ’ টাকা নগদ দেয়া হবে, একই নামায মসজিদে গিয়ে আদায় করলে দুই শ’ টাকা এবং মসজিদে সামনের কাতারে আদায় করলে পাঁচ হাজার চার শ’ টাকা করে নগদ দেয়া হবে। নগদ লাভের আশায় প্রায় সবাই কি হুমড়ি খেয়ে পড়বে না ? অবশ্যই। এমনকি মসজিদে আগে গিয়ে সামনের কাতারভুক্ত হওয়ার জন্য সর্বত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি বাস্তবে সেটা হচ্ছে না। কারণ বেশির ভাগ মুসলমানের বিশ্বাসে ঘাটতি আছে, তাই ‘বাকী’তে লেনদেন করতে অনাগ্রহী।
একই ভাবে ধরা যাক, আল্লাহর প্রতিটি আদেশ পালনের এবং নিষেধ বর্জনের জন্য যদি নগদ পাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে কি সবাই সম্পদশালী হওয়ার জন্য সর্বত্র প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ত না ? অবশ্যই। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ফলে সমাজ ক্রমাগত রসাতলে যাচ্ছে। এভাবেও প্রমাণিত হলো বিশ্বাসে ঘাটতি থাকার কারণেই আমরা বাকীতে লেনদেন করতে অনাগ্রহী। আফসোস, মানুষ যদি জানত তাহলে পৃথিবীর সব সম্পদের বিনিময়েও পরকালের জীবনের সুখ ও শান্তি বিক্রি করত না।

যেকোনো কাজে সফলতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সব সময় তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করি, কারণ আমরা কেউ-ই কখনো ব্যর্থ হতে চাই না, এটাই স্বভাবিক। জীবন তো একটাই তাই জীবন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরী। মানুষের জীবন পরিক্রমা নিন্মোক্ত পাঁচটি পর্বে বিভক্ত ঃ আলমে আরওয়াহ (রূহানী জীবন), আলমে আসবাব (ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জীবন), আলমে বরজখ (কবরের জীবন), আলমে হাশর (হাশরের জীবন), আলমে আখিরাত (চিরস্থায়ী পরকালের জীবন)।
উপরোক্ত পাঁচটি পর্বের মধ্যে আমরা শুধু দ্বিতীয় পর্বের সাথে পরিচিত। ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান দিয়ে বাকী চার পর্বের কোনো কিছুই মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী, যা আমরা প্রতিনিয়তই চোখের সামনে দেখতে পাই। এখানে আসার সিরিয়াল আছে, কিন্তু যাওয়ার সিরিয়াল নেই। আমরা পৃথিবীতে ছিলাম না এটা যেমন সত্য, আমরা পৃথিবীতে থাকব না, এটাও তেমন সত্য। তাই ভেবে দেখা উচিত আমরা কোথায় ছিলাম এবং কোথায় যাবো।
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরকালের জীবন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন। ইহকালের জীবন কিভাবে যাপন করলে পরকালের জীবন সার্থক হবে, তা-ও পবিত্র কুরআনে বিস্তারিত বর্ণিত আছে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী, পবিত্র কুরআনের নির্দেশ কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়, তা-ও দেখিয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে।
পবিত্র কুরআন থেকেই আমরা জানতে পারি, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জীবন একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র, এখানে শিরকমুক্ত ঈমান নিয়ে আল্লাহর আদেশ পালন ও নিষেধ বর্জন করলে চিরস্থায়ী পরকালের জীবন সফলতায় ভরে উঠবে। তুলনামূলক বিচারে কোন জীবনের গুরুত্ব সর্বাধিক হওয়া উচিত, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জীবন ? না চিরস্থায়ী পরকালের জীবন ? একবাক্যে সবাই বলবে চিরস্থায়ী পরকালের জীবন।
আমাদের আসল সমস্যা হচ্ছে বাকীতে লেনদেন নিয়ে অর্থাৎ বিশ্বাস নিয়ে। সব লেনদেন যদি নগদে হতো তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকত না। শুধু যারা একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী তারা সেই বিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে বাকীতে লেনদেনে নিয়োজিত। সংখ্যায় এরা খুবই নগণ্য। বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাসে ঘাটতি থাকায় বাকীতে লেনদেনে সন্দিহান ও দিধাগ্রস্ত।

আমরা সবাই জানি, ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন এবং আমরা তা পেয়েছি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে। পবিত্র কুরআন নাযিল যখন শুরু হয়, তখন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বয়স চল্লিশ। নবুওয়াত লাভের আগে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তিনি তাঁর সত্যবাদিতার জন্য ‘আল আমীন’ হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত ছিলেন। জানা যায়, আমানত রাখার ব্যাপারে অমুসলিমরাও রাসূলকে সর্বাধিক বিশ্বাস করতেন।
আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চারিত্রিক গুণাবলী নিয়ে এখানে আলোকপাত করতে চাই না, শুধু এটুকু উল্লেখ করতে চাই, মিথ্যা কখনো যাকে স্পর্শ করেনি সে মহামানবের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবন বিধান পেয়েছি। আল-হামদুলিল্লাহ।
মহান আল্লাহ জানেন আমরা সন্দেহপ্রবণ। তাই কুরআনের মাধ্যমে (সূরা বাকারা, আয়াত ২৩-২৪) আল্লাহ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এভাবে, ‘যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে, যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মতো একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এসো। অবশ্য তা তোমরা কখনো পারবে না।
১৪০০ বছর আগের সেই চ্যালেঞ্জটি এখন পর্যন্ত বহাল আছে। একটি সূরা তো দূরের কথা, কুরআনের অনুরূপ একটি আয়াতও ১৪০০ বছরে রচনা করা সম্ভব হয়নি।
সূরা বাকারার ৬৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও মেহেরবানী যদি তোমাদের ওপর না থাকত, তবে অবশ্যই তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, মহাবিশ্ব থেকে প্রতিনিয়ত যা কিছু পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয়, তা যদি এসে পড়ত তাহলে ধ্বংস ছিল অনিবার্য।
পবিত্র কুরআনে বিজ্ঞান সম্পর্কিত অসংখ্য আয়াত আছে। ১৪০০ বছর আগে সেই আয়াতগুলো এক অর্থে ছিল বাকী অর্থাৎ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ছিল না। বর্তমানে বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির ফলে বেশির ভাগ বিজ্ঞান সম্পর্কিত আয়াত, ধরা যাক ৮০ শতাংশ নগদায়ন হয়েছে অর্থাৎ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অন্য দিকে একটি আয়াতও বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল প্রমাণিত হয়নি।
ধরা যাক, এখনো বিজ্ঞান সম্পর্কিত ২০ শতাংশ আয়াত বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। বিজ্ঞানের ত্রুমাগত উন্নতির চাকা কিন্তু থেমে নেই। ১৪০০ বছর থেকে বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির ধারাবাহিকতায় হতে পারে এখন থেকে ৫০০-৭০০ বছর পরে আরো অনেক বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে, প্রমাণিত হবে আরো কিছু আয়াত, তারপর আরো কিছু আয়াত…।
এই বিশ্লেষণ থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা যতই বাড়বে, পবিত্র কুরআনের বাণী ততই সত্য প্রমাণিত হবে। এই সত্যটি অনুধাবন করতে যেন বেশি বিলম্ব না হয়। তাই আসুন, চিরস্থায়ী পরকালের জীবনে সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে আমরা কুরআন ও সুন্নার আলোকে জীবনযাপন করার ক্ষেত্রে এখনই প্রতিযোগিতা শুরু করি।
No comments